Tuesday, February 20, 2018

কোন মুসলিমের জন্য শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, শ্রদ্ধা জানানো যায়েজ কি?একুশের শির্ক.....

একুশের শির্ক


শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া বা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর প্রচলিত এই রীতি কেন শির্ক সেটা নিয়ে অনেকেরই এখনো  সন্দেহ আছে । তাওহিদের মৌলিক কিছু বিষয় আছে সেটা পরিষ্কার হলেই এতে আর সংশয় হবে না ইন-শা-আল্লাহ।
.
মক্কার মুশরিকদের অনেকেই আল্লাহকেই একমাত্র রব্ব হিসেবে মানতো, আল্লাহকেই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ইত্যাদি মানতো। তাওহিদের এই অংশগুলোতে তাদের অনেকেরই ভ্রান্তি ছিল না। কিন্তু তবুও তারা িল মুশরিক কেননা তাদের সমস্যা ছিল তাওহিদ আল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদাতে। তারা নির্জীব মনুষ্য তৈরি মূর্তিদের পূজা করতো, সম্মান প্রদর্শন করতো। আল্লাহ তালা কুরআনে বলেন
.
قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَـٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَىَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَىِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ‌ۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُ‌ۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ (
٣١)
.
জিজ্ঞেস করুন, আসমান জমিন থেকে কে তোমাদের রিযক দেন? অথবা কে শ্রবণ দৃষ্টিসমূহের মালিক? কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন, আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। সুতরাং আপনি বলুন, তারপরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?” [সূরা ইউনূস, ৩১]
.
স্বয়ং আল্লাহ সম্পর্কে সহীহ ইলম সত্ত্বেও তারা ছিল মুশরিক, কেননা তারা মূর্তিপূজা, মূর্তিকে সম্মান জানানো ইত্যাদি শির্কি কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকে নি। আজকের দিনের শির্ক কীভাবে হয় তার একটা খন্ডচিত্র হল এইআমরা ভোরে উঠে অযু করে পবিত্র হই, ফজরের সলাতে যাই, মসজিদে প্রবেশ করি খালি পায়ে, অতঃপর খুশু সহকারে সলাত আদায়ের চেষ্টা করি। এই সমস্ত কার্যকলাপ একমাত্র আল্লাহ রব্বুল লামীনের ইবাদাহের অংশ। কিন্তু আশ্চর্য হল, কিছু মানুষ একইরকম কার্যকলাপ করে থাকে নিজেদের সংজ্ঞায়িত শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে, শহীদ মিনার নামক স্তম্ভে ফুল দিয়ে। তারা সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে খুশু সহকারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। পৌত্তলিকতার আধুনিক জাতে উঠা ভার্সন বললেই যেন সঠিক হয়।
.
এই ধরনের শির্ক হলতাওহিদ আল-ইবাদাহঅর্থাৎইবাদাতে আল্লাহ্ একত্ব অক্ষুন্ন রাখাএর বিপরীত।তাওহিদ আল-ইবাদাহবাউলূহিয়্যাহএর মাধ্যমে যেমনিইবাদাতে আল্লাহ্ একত্ব অক্ষুন্ন রাখাহয়, তেমনি এর বিপরীতে অন্তরে বিশ্বাস না করলেও মানুষ কোনো একটি কাজের মাধ্যমে শির্কে, কুফরিতে লিপ্ত হতে পারে। তাই অন্তরে বিশ্বাস না করলেও বেদিতে ফুল, সম্মান ইত্যাদির মত শির্কের কার্যাবলি থেকে নিজেকে হিফাজত রাখাও মুমিনদের অবশ্য কর্তব্য। কারণ শির্ক হল কবীরাহ গুনাহের মধ্যেও সবচেয়ে বড় কবীরাহ গুনাহ। এতই মারাত্নক যে, অন্য যেকোনো গুনাহ করা ব্যক্তি তওবাহ না করলেও আল্লাহ রব্বুল লামীন তাঁর রহমতের অসিলায় ক্ষমা করে দিতে পারেন, কিন্তু শির্ক করে তওবাহ না করেই মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তা কখনো ক্ষমা করবেন না বলে দিয়েছেন।
.
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٲلِكَ لِمَن يَشَآءُ‌ۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَـٰلاَۢ بَعِيدًا (
١١٦) إِن يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦۤ إِلَّآ إِنَـٰثً۬ا وَإِن يَدۡعُونَ إِلَّا شَيۡطَـٰنً۬ا مَّرِيدً۬ا (١١٧)
.
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যেই আল্লাহর সাথে কোনকিছু শরীক করে সে তো (সরলপথ থেকে) সুদূরে ভ্রান্তিতে পতিত হয়।” [সূরা নিসা, ১১৬]
.
ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبَّڪُمۡ‌ۖ إِنَّهُ ۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَٮٰهُ ٱلنَّارُ‌ۖ وَمَا لِلظَّـٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٍ۬ (
٧٢)
.
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর এরূপ অত্যাচারী লোকদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না।” [সুরা মায়িদাহ, ৭২]
.
শুধুমাত্র এই শির্কের ভয়াবহতা নিয়ে শত পৃষ্ঠা লিখা সম্ভব। তার চেয়ে হতভাগা তো কেউ নেই যে কিনা এতকিছু জানলো কিন্তু তবুও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে ঈমানদার হয়েও শির্কে লিপ্ত হল যেমনটি আল্লাহই বলেছেন
.
وَمَا يُؤۡمِنُ أَڪۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ (
١٠٦)
.
অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে, কিন্তু সাথে সাথে শির্কও করে” [সূরা ইউসুফ, ১০৬]
.
বিদআহগুলো কিন্তু ভাল নিয়্যাতেই শুরু হয়। আর শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে অন্তরের দিক থেকে শির্কে না জড়ালেও মানুষ অন্ততপক্ষে বিদআতে লিপ্ত হয়। আর বিদআতের ভয়াবহতা নিয়েও সহস্র শব্দ লিখিত হয়েছে। স্রেফ এতটুকুই বলি - প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম হল আগুন।
.
আল্লাহর ইচ্ছায় সতর্ক করা হল আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনকে অবিকৃতভাবে গ্রহণের তাওফিক দিন। আল্লাহ আমদেরকে সব ধরনের শির্ক, বিদআত থেকে হিফাজত করুন। আমিন।
.
ٱلَّذِينَ ضَلَّ سَعۡيُہُمۡ فِى ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَهُمۡ يَحۡسَبُونَ أَنَّہُمۡ يُحۡسِنُونَ صُنۡعًا (
١٠٤) أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِـَٔايَـٰتِ رَبِّهِمۡ وَلِقَآٮِٕهِۦ فَحَبِطَتۡ أَعۡمَـٰلُهُمۡ فَلَا نُقِيمُ لَهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَـٰمَةِ وَزۡنً۬ا (١٠٥)
.
“(
হে নবী আপনি) বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে কর্মে কারা সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তা বলে দিব? তারা হল সেই সব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সমস্ত দৌড়-ঝাপ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, অথচ তারা মনে করে, তারা খুবই ভাল কাজ করছে।” [সূরা কাহফ, ১০৪]

No comments:

Post a Comment